বর্তনী বা সার্কিট

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - পদার্থবিজ্ঞান - চল বিদ্যুৎ (Current Electricity) | NCTB BOOK
1.7k

আমরা যদি ও'মের সূত্র বুঝে থাকি তাহলে আমরা এখন সার্কিট বিশ্লেষণ করতে পারি। সেটা করার আগে সার্কিটে ব্যবহার করা হয় এ রকম কয়েকটি প্রতীকের সাথে আগে পরিচিত হয়ে নিই: (চিত্র 11.07)

                                         চিত্র 11.7; সার্কিট বা বর্তনীতে ব্যবহার করা হয় এ রকম কিছু প্রতীক

 

সব পদার্থেরই কিছু না কিছু রোধ আছে কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সার্কিটে ব্যবহারের সময় বৈদ্যুতিক তারের রোধকে আমরা ধর্তব্যের মাঝে নিই না। যখন রোধ প্রয়োজন হয় তখন আমরা বিশেষভাবে তৈরি বিভিন্ন মানের রোধ ব্যবহার করি। কখনো কখনো বিশেষ প্রয়োজনে এমন রোধ ব্যবহার করা হয় যেখানে তার মানটি পরিবর্তনও করা যায়, এগুলোকে পরিবর্তনশীল রোধ বলে। 

কোনো সার্কিট বিশ্লেষণ করতে হলে নিচের কয়েকটা সোজা বিষয় মনে রাখাই যথেষ্ট; 

(a) বিদ্যুতের উৎসের (ব্যাটারি সেল, জেনারেটর যাই হোক) উঁচু পটেনশিয়াল থেকে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ বের হয় পুরো সার্কিটের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ঠিক সেই পরিমাণ বিদ্যুৎ কম পটেনশিয়ালে ফিরে আসে। 

(b) সার্কিটের যেকোনো জায়গার যেকোনো বিন্দুতে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ঢোকে ঠিক সেই পরিমাণ বিদ্যুৎ বের হয়ে যায়, সার্কিটের ভেতরে বিদ্যুতের কোনো সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই। 

(c) সার্কিটের ভেতরে যেকোনো অংশের দুই বিন্দুতে ওহমের সূত্র সব সময় সত্যি হবে, অর্থাৎ সেই দুই অংশের যে পরিমাণ বিভব পার্থক্য রয়েছে ডাকে সেই অংশের রোধ দিয়ে ভাগ দিলেই তার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত বিদ্যুৎ বের হয়ে যাবে। 

আমরা এখন যেকোনো বর্তনী বা সার্কিট বিশ্লেষণ করতে প্রস্তুত। একটা সার্কিটের যেকোনো অংশ দিয়ে কতটুকু বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে এবং যেকোনো অংশের বিভব কত সেটা জানলেই আমরা ধরে নেব সার্কিটটা আমরা পুরোপুরি বুঝে গেছি। একটা সার্কিটে ব্যাটারি সেল, রোধ, ক্যাপাসিটর, ডায়োড, ট্রানজিস্টর অনেক কিছু থাকতে পারে। তবে আমরা আপাতত শুধু ব্যাটারি সেল আর রোধ দিয়ে তৈরি সার্কিট বিশ্লেষণ করব। সার্কিটে বিভিন্ন রোধ তামার তার দিয়ে সংযুক্ত করা হয়, যদিও আমরা দেখেছি তামারও একটি আপেক্ষিক রোধ আছে। কিন্তু বাস্তব জীবনে সার্কিটে যে রোধ ব্যবহার করা হয় তাদের তুলনায় এটি এত কম যে আমরা এটাকে ধর্তব্যের মাঝেই আনব না। ধরে নেব তারের রোধ নেই। কাজেই একটা তারের সব জায়গায় বিভব সমান। 

চিত্র 11.08: আক্রি ব্যাটারি সেল এবং একটি রোধ সংযুক্ত দুটি বর্তনী বা সার্কিট

এবারে 11.08a চিত্রে দেখানো একটা বর্তনী বিশ্লেষণ করা যাক, এখানে একটা রোধকে দুটো তার দিয়ে একটা ব্যাটারি সেলের দুই মাথায় লাগানো হয়েছে। যেহেতু CD অংশটুকু ভূমিসংলগ্ন করা হয়েছে তাই আমরা বলতে পারব ব্যাটারি সেলের নিচের প্রান্তটির বিভব হচ্ছে শূন্য। তাই ব্যাটারির উপরের প্রান্তের বিভব V এবং BC অংশে একটা রোধ, রোধের দুই পাশে বিভব পার্থক্য হচ্ছে 

                                                               V-0=V

কাজেই রোধ যদি R হয় তাহলে এর ভেতর দিয়ে যে বিদ্যুৎ I প্রবাহিত হচ্ছে তার মান 

                                                                 I=VR

কাজেই ব্যাটারির A থেকে I বিদ্যুৎ বের হয়ে B বিন্দুতে ঢুকে যাচ্ছে। আমরা এই সার্কিটের প্রত্যেকটা বিন্দুতে বিভব আর বিদ্যুৎ বের করে ফেলেছি। 

ধরা যাক হুবহু একই সার্কিটে আমরা যদি DC অংশ ভূমিসংলগ্ন না করে AB অংশ ভূমিসংলগ্ন করি (চিত্র 11.02b) তাহলে কী হবে? ব্যাটারি সেলটা যেহেতু V ভোল্টের তাই A এবং D এর পার্থক্য v থাকতেই হবে, যেহেতু A এর বিভব শূন্য তাই D এর বিভব নিশ্চয়ই -V. কাজেই B এবং C এর বিভব পার্থক্য 

                                                         0-(-V)=V

ভেতরকার রোধ R, কাজেই বিদ্যুৎ প্রবাহ: 

                                                                I=VR

অর্থাৎ ঠিক আগের মান, যেটাই হওয়ার কথা। লক্ষ করো পটেনশিয়ালের মান পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু পার্থক্য পরিবর্তন হয়নি। 

 

Content added By
Content updated By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...